~আচ্ছা ভাইয়া এক প্যাকেট বেনসন সিগারেটের দাম কত রে?
--কি!! তুই এইসব খারাপ জিনিসের দাম কেন জানতে চাস? এক থাপ্পড় দিয়ে চাপার দাঁত ফেলে দিবো।
~আসলে ভাইয়া আমি তোকে বলছি না তুই সিগারেট খাস কিন্তু আজ তোর কাপড় ধুতে গিয়ে তোর প্যাণ্টের পকেটে যে সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার পেয়েছি সেটা শুধু আম্মুকে বলবো।
জান্নাতের(আমার ছোট বোন) মুখ থেকে এই কথাটা শুনার পর আমার মুখ একদম শুকিয়ে গেল। পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করে ৫০০ টাকার একটা নতুন চকচকা নোট বের করে বোনের হাতে দিয়ে বললাম,
--আমার লক্ষ্মী বোন টিউশানির টাকাটা এখনো পাই নি আপাতত ৫০০ টাকা রাখ কথা দিচ্ছি টিউশানির টাকাটা পেলেই তকে বাকি টাকাটা দিয়ে দিবো।
আমার কথা শুনে বোন আমার দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
~শ্রদ্ধেয় ভাইজান বাকি চাহিয়া এই ছোট বোনটাকে লজ্জা দিবেন না। ১০০০ টাকা থেকে যদি ১ টা কম দেন তাহলে শুনে রাখেন আজ আমাদের পরিবারে আপনাকে নিয়ে তৃতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হবে বলে দিলাম।
বোনের মুখ থেকে এই আপনি আপনি করে বলা মধুর বাক্যটি শোনার পর নিজের মানিব্যাগ থেকে শেষ সম্বলটুকু ৫০০ টাকার আর একটা নোট বোনের হাতে তুলে দিয়ে আল্লার কাছে মনে মনে বলতে লাগলাম, কোন পাপে যে এই রকম একটা বোন আল্লা আমার কপালে দিলে যে বোন কি না প্রতিনিয়ত তার ভাইয়ের কষ্টের টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যাচ্ছে।
সাজসকালে ১০০০ টাকা হারানোর কষ্ট নিয়ে বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে বাজারে যাচ্ছি আর মনে মনে চিন্তা করছি এই বাজারের টাকা থেকে কিছু টাকা চুরি করে আপাতত নিজের হাত খরচটা চালাতে হবে।
বাজার নিয়ে এসে মা কে বললাম,
-- মা আর কোনো কিছু বাজার থেকে কেনা যাবে না,
মা বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে বলবো,
~ কেন কি হয়েছে?
আমি তখন মুখটা গম্ভীর করে মুখে একটা হতাশার চাপ এনে বললাম,
--আর বল না মা, গরুর গোশত ৮০০ টাকা কেজি আর খাসীর গোশত ১০০০।তাই কি আর করবো উপায় না দেখে ১ কেজি গরু আর ১ কেজি খাসীর গোশত নিয়ে এসে পড়েছি।
মা মনে হয় আমার কথা বিশ্বাস করলো। কিছু না বলে বাজার নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল।আমি তখন মনের আনন্দে নিজের রুমে এসে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম, যাক কিছু টাকা অন্তত পেয়েছি হাত খরচের জন্য।
তার কিছুক্ষণ পর আমার আদরের ছোট বোন এসে বললো,
~ ভাইয়া আজকের পত্রিকা দেখেছিস?
আমি তখন হাতের তুরি বাজিয়ে নায়ক মিঠুন চক্রবর্তীর ডায়লগ নকল করে বললাম,
--পিয়াস খবর দেখে না, খবর পড়ে না, খবর তৈরি করে।
বোন আবার সেই আগের মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
~আসলে ভাইয়া পত্রিকার একটা পাতায় বড় বড় অক্ষরে লেখা কাওরান বাজারে গরুর গোশত ৪৫০ টাকা আর খাসীর গোশত ৬৫০ টাকা কেজি। আর এই খবরটা যদি মাকে দেয় তাহলে তোর কি অবস্থা হবে বল তো?
আমি চোরের মত বোনের কাছে আকুতি মিনুতি করে বললাম,
-- বোনরে তুই তো জানিস আমি একটা প্রেম করি। আর বর্তমান বাজারে একটা গার্লফ্রেন্ড লালন পালন করা যে কতটা কষ্টের সেটা একমাত্র বেকার ছেলেরাই বুঝে। প্লিজ বোন টাকাটা আমার কাছে থাক।
~ঠিক আছে কি আর করা। হাজার হোক তুই আমার বড় ভাই। ৩০০ টাকা আমায় দিয়ে দে আর ৪০০ টাকা না হয় তুই রেখে দে।
ইচ্ছা না থাকা শর্তেও বোনকে ৩০০ টাকা দিলাম।আর মনে মনে বলতে লাগলাম, মা বাবা ওর নাম জান্নাত না রেখে জাহান্নাম রাখলেই পারতো।
সেদিন বাসায় এসে আমার বোনকে বললাম,
--জান্নাত কিছু খেতে দে তো। খাওয়ার পর এক জায়গাতে যাবো।
বোন আমার রাগে চিৎকার করে বলতে লাগলো,
~নিজের খাবার নিজে নিয়ে খেতে পারিস না? আমাকে কি তোর কাজের মেয়ে মনে হয়? সব সময় শুধু কাজ করতে বলিস।
আমি কিছু না চুপচাপ নিজের রুমে এসে পড়লাম। বুঝতে পারছিলাম বোনকে হয়তো আম্মু বকেছে তাই রেগে আছে। হঠাৎ খেয়াল করলাম বিছানার উপর একটা কমলা রঙের চিরকুট আর তাতে লেখা,
-*ভাইয়া একটু ওয়ারড্রবের সামনে
যা-*
আমি ওয়ারড্রবের সামনে যেতেই দেখলাম একটা হলুদ চিরকুট আর তাতে লেখা,
-*ভাইয়া ওয়ারড্রবের ৩ নাম্বার ড্রয়ারটা একটু খোল-*
আমি ওয়ারড্রবের ৩ নাম্বার ড্রয়ারটা খুলে দেখি একটা ছোট বক্স আর তার উপরে লাল একটা চিরকুটে লেখা,
-*বক্সটা খুলে দেখ*-
আমি বক্সটা খুলে দেখি একটা চাবি আর সবুজ একটা চিরকুট। চিরকুটে লেখা,
-* ভাইয়া একটু বারান্দায় যা*-
আমি বারান্দায় এসে দেখি সুতা দিয়ে টানানো একটা হলুদ খাম ঝুলছে।
আমি হলুদ খামটা খুলে দেখি একটা নীল চিরকুট আর তাতে লেখা,
*- শুভ জন্মদিন ভাইয়া।
তোর এইখান থেকে নেওয়া এযাবতকালের সব টাকা আমার বৃত্তির সমস্ত টাকা আর বাকী টাকা মামার কাছ থেকে নিয়ে তোর জন্য একটা জিনিস কিনেছি। একটু নিচে তাকিয়ে দেখ*-
নিচে তাকিয়ে দেখি আমার বোন আমার পছন্দের একটা লাল রঙ এর বাইক কিনেছে।
জানি না নিজের মাঝে কি হলো মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তে লাগলো।
পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার বোন দাঁড়িয়ে আছে। বোন চোখের কোনে একফোঁটা জল নিয়ে আমায় বললো,
~এই যে জমিদাম খাবার খেয়ে আমায় উদ্ধার করেন।পেয়েছেন তো একটা বিনে পয়সায় কাজের মেয়ে।আর হে বাইকের পিছনের সিটটা শুধু গার্লফ্রেন্ডের জন্য র